মানিকগঞ্জের সিংগাইরে রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে চারটি বসতবাড়ি ও কারখানা। এসময় দুজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। হামলার সময় লুটপাটও চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা।
বুধবার (১১ অক্টোবর) দিনগত মধ্যরাতে উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিন দেখা যায়, পাকা রাস্তার পাশে গফুর মিয়ার ১০ রুমের একটি আধাপাকা ঘর ছিল। গুঁড়িয়ে দেওয়ায় ঘরটি এখন ধ্বংসস্তূপ। ঘরের ঘাট, আলমারি ও ভাঙা টিভি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। পাশেই বাহের আলীর বাড়ি। বাড়িতে ঢোকার টিনের বেড়া ভাঙচুর করা হয়েছে। দুটি ঘরের ভেতরে আলমারি ও শোকেজ খোলা। পুরো ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো।
একই অবস্থা জাকির হোসেনের বেতের কারখানাতেও। অফিস রুমে জিনিসপত্র সবই তছনছ করা হয়েছে। প্রধান গেটটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙচুর অবস্থায় পড়ে আছে ফারুক আহমেদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর।
ভুক্তভোগী গফুর মিয়া জানান, স্থানীয় বাসিন্দা বাহের আলীর কাছ থেকে তিনি জমি কিনে দীর্ঘদিন ধরে আধাপাকা ঘর তুলেছেন। ১০টি কক্ষেই ভাড়াটিয়া ছিল। বুধবার মধ্যরাতে ভাড়াটিয়ারা তাকে জানান, বাড়িতে ভেকু নিয়ে শতাধিক সন্ত্রাসী হামলা করেছে। ভাড়াটিয়াদের ঘরের বাইরে বের করে দিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালাচ্ছেন তারা। তারা ১০টি কক্ষই ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টি ৯৯৯ নম্বরে কল করার পর সিংগাইর থানা থেকে দুই দফায় পুলিশ আসে। কিন্তু তারা সন্ত্রাসীদের ধরা অথবা ঘটনাস্থল ত্যাগ করাতে পারেনি।
ভুক্তভোগী জাকির হোসেন ও ফারুক আহমেদ জানান, তারা বিভিন্ন সময় স্থানীয় বাহের আলী ও তার ভাইদের কাছ থেকে জমি কিনে বসতবাড়ি ও কারখানা করে বসবাস করে আসছেন। বাহের আলীর সঙ্গে তার চাচাতো বোন পিয়ারজান ওরফে আউসি বেগমের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে একাধিক মামলা ও গ্রাম্য সালিশও হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় হঠাৎ করে রাতের আঁধারে শতাধিক সন্ত্রাসী ভাড়া করে তাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, হামলাকারীরা এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেন। ভাঙচুরের শব্দে গ্রামের সবার ঘুম ভাঙলেও কেউ ভয়ে এগিয়ে আসেননি। আশপাশের বাড়ির সামনে লোক পাহারায় ছিল।
ওই ব্যক্তির ভাষ্যমতে, ভাঙচুরে শতাধিক ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী অংশ নেয়। তাদের প্রত্যেকের বয়স ২০-২৫ বছরের মধ্যে। সবাই মদ্যপ অবস্থায় ছিল। হাতে ছিল চাইনিজ কুড়াল, রাম দা, লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্র। রাত সাড়ে ১২টা থেকে সাড়ে ৩টা পযর্ন্ত এ ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এরপর চলে যায় সন্ত্রাসীরা।
অভিযুক্ত পিয়ারজান ওরফে আউসি বেগম বলেন, তার সঙ্গে চাচাতো ভাই বাহের আলীর জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছে। তবে রাতের আঁধারে ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে তারা জড়িত নন। কারা করেছেন তা তিনি জানেন না।বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মিজানুর রহমান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকার বলেন, ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। জড়িতদের খুব শিগগির আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ ছাড় পাবেন না।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply