মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে হাত-পা বেঁধে ফাঁস দিয়ে স্বামী মো. অলিউল্লাহ মোল্লাকে (৪২) হত্যার দায়ে স্ত্রী মাজেদা বেগমকে (৩০) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ কাজী আব্দুল হান্নান আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।দণ্ডপ্রাপ্ত মাজেদা বেগম জেলার শ্রীনগর উপজেলার হাষাড়া ঢালী পাড়া গ্রামের মো. নুরু খলিফার মেয়ে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, শ্রীনগর উপজেলার পুটিমারা গ্রামের প্রবাসী অলিউল্লাহ তার স্ত্রী মাজেদা ও ৩ সন্তান নিয়ে আলাদা বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। অলিউল্লাহ সৌদি আরবে থাকতেন। মাঝে মধ্যে দেশের বাড়িতে আসতেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে ছুটিতে তিনি দেশে ফিরে আসেন; কিন্তু পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না।ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘুমাতে যান অলিউল্লাহ। পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি সকালে ২ সন্তান নিয়ে বাড়ি থেকে বাইরে চলে যান স্ত্রী মাজেদা। এ অবস্থায় ওই দিন দুপুরে ভাই মো. আহসান উল্লাহ বাড়িতে এসে গলায় ওড়না পেঁচানো ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অলিউল্লাহকে ঘরের ভেতর দেখতে পান। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অলিউল্লাহর মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. আহসান উল্লাহ খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে হাত-পা বেঁধে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে স্ত্রী মাজেদা বেগম, শ্বশুর নুরু খলিফা, শ্যালক মো. হাবিব ও মো. মাসুমকে আসামি করে শ্রীনগর থানায় মামলা করেন। মামলার পর নিহতের স্ত্রী মাজেদা বেগম থানা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরবর্তীতে এ মামলায় স্ত্রী মাজেদা বেগমকে একমাত্র অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
মামলার বাদী আহসান উল্লাহ জানান, আমার ভাইয়ের বউ ছোট ভাইকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করায় আমি শ্রীনগর থানায় মামলা করি। ওই মামলা ৮ বছর পর আদালত রায় দিয়েছেন। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. হালিম হোসেন জানান, ২০১৭ সালে শ্রীনগর উপজেলায় সৌদি প্রবাসী ওয়ালিউল্লাহকে তার স্ত্রী মাজেদা বেগম খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সচেতন করে ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় অলিউল্লাহর ভাই আহসানুল্লাহ বাদী হয়ে শ্রীনগর থানায় মামলা করে। ওই মামলায় ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় প্রদান করেন আদালত।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply