ঢাকার দোহার উপজেলার ধীৎপুর এলাকায় চাঞ্চল্যকর একই পরিবারের ৫ জনকে রাতের আধারে ঘুমন্ত অবস্থায় বাড়িতে তালাবদ্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ রুবেল (২১) ও তার প্রধান সহযোগী মোঃ রানা মাহমুদ (২৪) কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০।
গ্রেপ্তারকৃত মোঃ রুবেল উপজেলার ধীৎপুর এলাকার মোঃ সুলতান শেখ এর ছেলে ও প্রধান সহযোগী মোঃ রানা মাহমুদ একই এলাকার নুরু শেখ এর ছেলে।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারী) বেলা ১১ টার দিকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর ক্যাম্প র্যাব-১০ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার সিপিসি-২ ও সহকারী পুলিশ সুপার এ.কে.এম. কাউসার চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ জানান, গত ১৬ জানুয়ারি আনুমানিক রাত পনেতিনটার দিকে উপজেলার ধীৎপুর এলাকায় বসবাসকারী জুলহাস উদ্দিন শেখ (৪৮), তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তার (৩৫), মেয়ে জান্নাত (১২), ছেলে জুনায়েদ (০৯) ও ভাতিজি তাবাসসুম (০৯) এই একই পরিবারের ৫ জনকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হত্যার উদ্দেশ্যে জুলহাস উদ্দিনের বসবাসরত বাড়ীতে (টিনসেড বিল্ডিং) বাহির হতে তালাবদ্ধ করে ঘরের চতুর্দিকে পেট্রোল ঢেলে আগুন জালিয়ে দেয়। পরে আগুনের তাপে ও আশবাবপত্র পুড়ার বিকট শব্দে জুলহাস উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘুম থেকে উঠে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ সময় এরা প্রাণ বাচাঁতে ও আসবাবপত্র রক্ষা করার জন্য এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করে এবং দরজা খুলার চেষ্টা করে। কিন্তু কোন ভাবেই দরজা খুলতে না পেরে বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ডাক-চিৎকার করতে থাকে। পরে ডাক-চিৎকারের এক পর্যায় জুলহাস উদ্দিনের ছোট ভাই মুক্তার হোসেন @ মুকাত (৩৮) ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে বাথরুমের দেওয়াল ভেঙ্গে জুলহাস উদ্দিনসহ তাদের পরিবারের সবাইকে আগুনে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে।
এ সময় জুলহাস উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তারের মুখ-মন্ডল, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান আগুনে ঝলসে যায়। আগুনের ধোয়ার কারনে জুলহাস উদ্দিনের মেয়ে, ছেলে ও ভাতিজির শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং তাদের ঘরে থাকা ফ্রিজ, টিভিসহ আনুমানিক ৩ লক্ষ টাকা মূল্যমানের অন্যান্য আসবাবপত্র আগুনে পুড়ে যায়।
এ ঘটনায় জুলহাস উদ্দিনের ছোট ভাই ও স্থানীয় লোকজন দোহার থানা পুলিশ ও দোহার উপজেলা ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দিলে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
পরে জুলহাস উদ্দিনের ছোট ভাই ও স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় জুলহাস উদ্দিনসহ তার পরিবারের আহত সবাইকে চিকিৎসার জন্য দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে রেফার্ড করেন।
র্যাব-১০ আরও জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগি জুলহাস উদ্দিনের ছোট ভাই মুক্তার হোসেন @ মুকাত (৩৮) বাদী হয়ে উপজেলার দোহার থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৬, তাং-১৬/০১/২০২৪ খ্রিঃ, ধারা-৩০৭/৪৩৬/৪২৭ দÐ বিধি।
এরই প্রেক্ষিতে অজ্ঞাতনামা আসামীদেরকে শনাক্ত করতে ও তাদেরকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গতকাল (১৮ জানুয়ারি) আনুমানিক রাত ৮ টার দিকে র্যাব-১০ এর আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা এবং র্যাব-৪ এর সহযোগীতায় রাজধানী ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী মোঃ রুবেল কে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃত রুবেল এর দেয়া তথ্যমতে উপজেলার ধীৎপুর এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে এবং সেখান থেকে এ ঘটনার প্রধান সহযোগী মোঃ রানা মাহমুদ গ্রেপ্তার করে।
র্যাব-১০ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মোঃ রুবেল পেশায় একজন কাঠ মিস্ত্রি। সে ভুক্তভোগি জুলহাস এর দুঃসম্পর্কের মামা এবং সেই সুবাদে দীর্ঘদিন যাবৎ জুলহাসের বাসায় বসবাস করে আসছিল। কিন্তু রুবেল অত্যান্ত দুস্ট প্রকৃতির লোক হওয়ায় এবং তার কথাবার্তা ও চালচলন জুলহাস উদ্দিনের কাছে অপছন্দ হওয়ায় জুলহাস গত ১৩-১৪ দিন পূর্বে রুবেলকে তাদের বাসা থেকে চলে যেতে বলে। পরে রুবেল বাসা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে জুলহাসের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায় এবং একপর্যায় রুবেল জুলহাসকে পরবর্তীতে দেখে নিবে বলে বিভিন্ন প্রকার হুমকি-ধামকি দিয়ে জুলহাসের বাসা থেকে চলে যায়।
পরবর্তীতে (১৬ জানুয়ারী) মঙ্গলবার মাঝরাতে জুলহাস ও তার পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পরলে রুবেল উক্ত বাসা থেকে বের করে দেওয়ার বিরোধের জের ধরে তার সহযোগী রানাসহ অন্যান্য সহযোগীদের সাথে নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে জুলহাসসহ তার পরিবারের সবাইকে বাড়ীর বাহির হতে তালাবদ্ধ করে বাড়ীতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল এবং এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর থেকে আসামীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply