সারা দেশের সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলি করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন, এমন ইউএনও এবং ছয় মাসের বেশি সময় ধরে দায়িত্বে রয়েছেন এমন ওসিদের বদলি করা হবে। তবে পর্যায়ক্রমে সবাইকে এর আওতায় আনা হবে।
ওসিদের বদলির বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠিটি পাঠিয়েছেন ইসির উপসচিব মো. মিজানুর রহমান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মহাপুলিশ পরিদর্শকের কাছেও চিঠিটির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে। একই দিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর পাঠানো পৃথক চিঠিতে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বদলির সিদ্ধান্তের কথা জানায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে ইসির উপসচিব মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ওসির বর্তমান কর্মস্থলে ছয় মাসের বেশি চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে, তাদের অন্য জায়গায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মহাপুলিশ পরিদর্শকের কাছেও চিঠিটির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর পাঠানো ইসির পৃথক চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব ইউএনওকে পর্যায়ক্রমে বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব ইউএনওর বর্তমান কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ এক বছরের বেশি হয়ে গেছে, তাদের অন্য জেলায় বদলির প্রস্তাব ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ইসিতে পাঠানো প্রয়োজন।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এতদিন ধরে পুলিশ ও প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে বড় রদবদল না আনার কথা বলা হয়েছিল। গত ২২ নভেম্বর এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। এ সময় তিনি বলেন, ‘মাঠ প্রশাসনে রদবদল করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা হলে তার দায় কে নেবে?’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালও গত রোববার এক প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, প্রশাসনে রদবদল কে কখন করেছিল? তবে এর চারদিনের মাথায় প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে বড় রদবদলের পথে হাঁটল নির্বাচন কমিশন। সংসদ নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল গত ৩০ নভেম্বর। ১-৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানির সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬-১৫ ডিসেম্বর। ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর।
বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের ৩০০ আসনে মোট ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩২ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ১ হাজার ৯৬৬ জন। বাকি ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল সাংবাদিকদের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার এ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার মোট প্রার্থীর এক-চতুর্থাংশই স্বতন্ত্র। আর প্রতি আসনে গড়ে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন।
আওয়ামী লীগ প্রাথমিকভাবে ২৯৮টি আসনে দলের মনোনয়নপত্র জমা দেয়। পরে পাঁচটি আসনে দুটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মনোনয়নপত্র জমা দেয় ২৮৬টি আসনে। পরে ১৮টি আসনে দুটি করে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দেয় তারা।
সূত্র: বণিক বার্তা।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply