ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার পদ্মা নদীবেষ্টিত বিভিন্ন চরজুড়ে এ বছর বর্ষা মৌসুম ঘিরে বাড়ছে সাপের উপদ্রব।এ বছর বর্ষার পানি কম হওয়ায় চরাঞ্চলের পথে-ঘাটে ও ফসলি মাঠে রাসেল ভাইপার সাপ বেশি বিচরণ করছে বলে আতঙ্কে ভুগছে কৃষক পরিবারগুলো।
গত কয়েক দিনে উপজেলার বিভিন্ন চরে সর্প দংশনের শিকার হয়েছেন অন্তত ৭ জন, মারা গেছেন ১ জন। বাকিরা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বৃহস্পতিবার চরভদ্রাসন সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আজাদ খান জানান, ইউনিয়নের কামারডাঙ্গী গ্রামের অমৃত মণ্ডলের স্ত্রী চার সন্তানের জননী বেদেনা রানী মণ্ডল (৪০) রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উপজেলায় সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি গামবুট পড়ে কৃষকদের মাঠে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
আহত রোগীর স্বামী অমৃত মণ্ডল জানান, তার স্ত্রী বেদেনা রানী বিকালে ধানখেতের বাঁধা মাটির ভিটির ওপর দিয়ে হেঁটে মাঠে যাচ্ছিল। এ সময় সে রাসেল ভাইপার সর্প দংশনের শিকার হয়ে প্রথমে বাড়িতে ওঝা দিয়ে ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে বিষ নামানোর চেষ্টা করেন। পরে রোগীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় চরভদ্রাসন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, গত কয়েক বছর আগে বন্যার পানির সঙ্গে রাসেল ভাইপার সাপ ভেসে এসে চরাঞ্চল ছেয়ে যায়। এরপর সাপগুলো উপজেলাজুড়ে বংশ বৃদ্ধি করে চলেছে। এ বছর উপজেলার কৃষক শ্রমিক ও মজুররা ফসলি মাঠে কাজ করতে গিয়ে সর্প দংশনের শিকার হচ্ছেন বেশি।
সম্প্রতি সাপে কেটে মারা যান উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের আমিনখারডাঙ্গী গ্রামের ময়নাল শেখের ছেলে লাবলু শেখ (৩৫)। আর সর্প দংশনের পর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন উপজেলার চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ চর কল্যাণপুর গ্রামের আফাজদ্দিন শেখের ছেলে মো. মিজানুর রহমান (২২), একই গ্রামের শফি মুন্সির ছেলে শাহাবুদ্দিন মুন্সি (২৫), তার মেয়ে স্বর্ণা আক্তার (১৮), চরহরিরামপুর ইউনিয়নের একরাম মাতুব্বরডাঙ্গী গ্রামের শেখ বাদশার ছেলে শেখ ইউনুচ (৩০) ও শালেপুর গ্রামের জয়নাল ফকিরসহ (৩৮) অনেকে। আহতরা কেউ ফসলি মাঠে কাজ করতে গিয়ে আবার কেউ চরের কাশবনে গরুর ঘাস কাটতে গিয়ে রাসেল ভাইপার সর্প দংশনের শিকার হয়েছেন বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার উপজেলার চর ঝাউকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধা বলেন, এ বছর ইউনিয়নে সাপের উপদ্রব ও ডেঙ্গু মশা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমি নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার পরিচ্ছনতা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং এ ব্যাপারে সবার সহায়তা কামনা করছি।
উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির বেপারী জানান, এ বছর বর্ষার পানি কম হওয়ায় চরাঞ্চলে বেশি সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা প্রতিরোধে চরাঞ্চলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রচুর পরিমাণে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক ইনজেকশন রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন সাপে কাটা রোগীর মাঝে প্রতিষেধক ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়েছে; কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এখনো ঝাড়ফুকে বিশ্বাসী সাপে কাটা রোগীদের হাসপাতালে আনতে বিলম্ব করা হচ্ছে। বিধায় বেশি ঝুঁকি পোহাতে হচ্ছে।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply