গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার নরাইট বিলে ফুটে আছে হাজার হাজার লাল শাপলা ফুল। এ যেন এক প্রাকৃতিক লাল স্বর্গ। দেখেই দু’চোখ জুড়িয়ে যাবে।
সবাই এ বিলকে শাপলা বিল নামেই পরিচিত। বিলটি উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের পূর্ব অংশ ও টোক ইউনিয়নের দক্ষিণের অংশ নিয়েই বিস্তৃত। তবে স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নরাইট বিলের ৯টি গোপ রয়েছে। আর আলাদা আলাদা ৯টি গোপের সমন্বয়ে বিস্তৃতি হয়েছে নরাইট বিল।
ছোট্ট এই গ্রাম এখন ভ্রমণ পিপাসুদের কেন্দ্রবিন্দু। বছরের এ সময়ে যারা ঢাকার আশেপাশে থাকেন, ছুটে আসেন বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। জুলাই থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়। পুরো বিলজুড়ে লাল শাপলার রাজত্ব। প্রথম দেখায় যে কারো মনে হবে, এ যেন চিত্র শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা লাল শাপলার চিত্রকর্ম। সূর্যের সোনালি রশ্মি পানিতে পড়তেই কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় নরাইট লাল শাপলার বিলের সৌন্দর্য। বিলের সঙ্গে যাদের বাড়ি, শাপলা তুলতে কিংবা মাছ ধরতে নৌকাই তাদের একমাত্র বাহন।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলা থেকে ঘুরতে এসেছেন জাহিদ হোসেনসহ তার বন্ধুরা। কথা জাহিদের সাথে। তিনি জানান, তার শখ ঘুরে বেড়ানো এবং ছবি তোলা। সময় পেলেই বন্ধুদের নিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন প্রকৃতিরটানে। তিনি মনে করেন ঘরাঘুরি করলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপশি প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসা যায়। দীর্ঘদিন ধরেই ইচ্ছা শাপলা ছিল নরাইট লাল শাপলার বিলে লাল শাপলার বিলে ঘুরতে আসবেন এবং লাল শাপলা নিয়ে ছবি তুলবেন। আজ সে আশা পূরণ হাওয়া তিনি খুব খুশি। এত কাছাকাছি এত সুন্দর স্থান তা জানা ছিল না। সত্যি নরাইট লাল শাপলার বিল খুব সুন্দর।
একই বলেন একই জেলার মনোহরদী উপজেলা থেকে ঘুরতে আসা চট্টগ্রাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাফাত জামিল সাগর। শাপলা বিলের হদিস পেতেই মনের মাঝে এক কল্পনার জগৎ তৈরি হয়েছে বলেও জানান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাগর।
অনেকের মতো আরো ঘুরতে এসেছেন গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভূবনের চালা গ্রামের বাসিন্দা আসাদুজ্জামান এরশাদ। এসেছেন স্থানীয় বঙ্গতাজ ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী মো. নাঈম ও কিশোর মো. মাসুম।
এছাড়াও এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় শ্রীপুর উপজেলার মাওনা এলাকা থেকে শাপলা বিলে ঘুরতে আসা ইমরানে হোসেন রিপনের সাথে। তিনি মাওনা এলাকার একজন ব্যবসায়ি। তার সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন তার বন্ধুরাও। তাদের মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে লালন করা ইচ্ছে ছিল কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের নরাইট লাল শাপলার বিলে ঘুরতে আসবেন। অবশেষে এলেন তার বন্ধুদের নিয়ে।
এই বিলে ঘুরতে এসেছেন একই এলাকার আনজামুল সিয়াম নামের গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও তার বন্ধুরাও। তিনি জানান, দিক-নির্দেশনা নিয়ে সকাল সকাল এসে পৌঁছান শাপলা বিলে। সিয়ামের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এসেছেন বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে। আশা করা যায়, শীঘ্রই এটি দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হবে।
সিয়াম আরো জানান, গাঢ় সবুজের বুকে এ যেন বাংলার ‘লাল স্বর্গ’। বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলা বেশি। বিলের যত ভেতরে চোখ যায় ততই লালের আধিক্য। একপর্যায়ে সিয়ামের মনে হলো শাপলার রাজ্যে হারিয়ে গেছেন তিনি। দেখতে পেলেন, কেউ কেউ মুঠো ভরে শাপলা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারলেন, শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, জীবিকারও মাধ্যম।
জানা গেছে, বিল থেকে শাপলা ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করে স্থানীয় ভিকারটেক এলাকার ৮/০টি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। এখানকার কেউ কেউ বিলের শাপলা ফুলের ওপর নির্ভরশীল। কেউ শাপলা তোলেন, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
অনেকের পছন্দের তরকারি শাপলা। গ্রামের মতো শহরেও দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সহজলভ্য শাপলা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শাপলায় আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি। শাপলা চর্ম ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী।
যেভাবে যাবেন
ভ্রমণ পিপাসু যারা এখানে যারা যেতে চান, তারা কাপাসিয়া সদর থেকে প্রথমে আমরাইদ বাজারে যেতে হবে। আমরাইদ বাজারে যাওয়ার পর পূর্বদিকের রাস্তা ধরে গিয়াসপুর পাড় হলেই জালাল (জইল্লা) মার্কেট। জালাল মার্কেটে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে।
এছাড়াও শাপলা ফুলের বিলের অপার সৌন্দর্য ঘুরে দেখতে চাইলে স্থানীয়দের কাছ থেকে ছোট নৌকা ভাড়া করা যায়। বিলে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে আত্মতৃপ্তি অনুভূত হবে। যেন এই তো শুধু আমার সোনার বাংলাদেশ নয়, সুখের ঠিকানা। এত কিছুর মাঝে আবার দেখা মিলবে অনেক পাখি। বক, মাছরাঙা, শালিক, চড়ুঁইসহ নাম না জানা পাখি এসে বিলের মাঝে কিচিরমিচির করে তাদের অস্থিত্ব জানান দিচ্ছে। যারা গাজীপুরের আশেপাশে থাকেন, তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। কম খরচে সহজে যাওয়ার জন্য উত্তম জায়গা এটি। এই বিলে নৌকায় চরে কাঁটাতে পারবেন সুন্দর মুহূর্ত।
রফিক সরকার,গাজীপুর
Leave a Reply