আর মাত্র কিছুদিন পরেই সুমলিম ধর্ম্ববল্বীদের দ্বিতীয় প্রধান উৎসব ঈদ-উল আযহা। ত্যাগের মহিমায় অনুপ্রানিত হয়ে মহান আল্লার সন্তুষ্টি লাভের আশায় সারাদেশে কোরবানি করা হয়ে লাখ লাখ পশু। আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে হাতুরীর টুংটাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কামার পল্লীগুলো। দোহার নবাবগঞ্জের কামার শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রমিকেরা কোরবানির পশু জবাই সরাঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোরবানির পশু জবাই ও গোশত প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত দা, বঁটি, ছুুরিসহ প্রয়োজনীয় অন্য সব উপকরণ তৈরিতে এখন দিনরাত কাজ করছেন মালিক-শ্রমিকরা। সকাল ৮টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে জ্বলছে কামার দোকানের চুলার আগুন।
রবিবার (১৮ জুন) সকাল থেকে দুপুর পযর্ন্ত দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, চারদিকে হাতুরী পেটানোর টুংটাং শব্দ। কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন দগদগে লাল লোহার খন্ড, আবার কেউ শান দিচ্ছেন ছুরি কিংবা বঁটি-চাপাতিতে, কেউবা আবার কয়লার আগুনে দিচ্ছেন বাতাস।
দোহার উপজেলার জয়পাড়া, মেঘুলা, নারিশা, কার্তিকপুর, কাচারীঘাট, পালামগঞ্জ ও লটাখোলা বাজার, অপরদিকে নবাবগঞ্জের উপজেলা সদর, বান্দুরা, বারুয়াখালী, ধুলসরা, আগলা, বাহ্রা বাজার একলাকায় প্রায় ৪০টির মতো কামারের দোকান রয়েছে। প্রতি দোকানে কারিগরসহ গড়ে ২/৩ জন কাজ করেন। তবে ঈদের সময় প্রতি দোকানে ৪/৫ জন করে লোক প্রয়োজন হয়।
জায়পাড়া বাজারের কামার মো. রাসেল বলেন, লোহা ও কয়লার দাম যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে আমাদের তৈরি পণ্যের দাম বাড়েনি। বর্তমানে প্রকারভেদে বঁটির দাম ৪ শত থেকে ২/৩ হাজার টাকা, গরু জবাইয়ের ছুুরি পাঁচশ’ থেকে ১৮শ’ টাকা, চাপাতি ছয়শ’ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া অন্যান্য ছুরি ২শত থেকে ৫শত টাকায় বিক্রি করছি। তবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদ সিজনে প্রতিটি পণ্যের দাম কিছুটা বেড়ে যায়।
নবাবগঞ্জের কামার সঞ্জীত কর্মকার বলেন, বাপ-দাদার পেশা হিসেবে লোহা পেটানোর কাজ করে আসছি। বর্তমানে এ কাজের চাহিদা খুবই কমে গেছে। বাবা, দাদারা এ কাজ শিখিয়ে গেছেন তাই তাদের পেশাকে ধরে রেখেছি।
মেঘুলা এলাকার কামার মধু কর্মকার বলেন, সারা বছর তেমন এসব লোহার সরঞ্জাম তৈরীর কাজ থাকে না। কারণ এখন আর আগের মত কৃষি কাজ নাই। আগে যেমন খেত খোলায় অনেক কাজ হত আর সেখানে লাঙ্গলের ফলা, টানা কাচি, ঠেলা কাচি, নিরাণী কাচি ব্যবহার করত কিন্তু এখন তা আর নাই। আর বছরে একবার কোরবানির ঈদ আসলে একটু কাজ হয়। কিন্তু সারা বছর আর আগের মতো এ কাজে তেমন হয় না।
কামার সিফুচন্দ্র কর্মকার বলেন, কোরবানীর ঈদ আসলে এ কাজের চাপ একটু বাড়ে। কিন্তু অন্যান্য সময় সারা বছর তেমন এ কাজ থাকে না। তবে ধীরে ধীরে এ কাজের পরিধি একটু বাড়তেছে।
সরকারি সহযোগীতা পেলে এ খাতও লাভের মুখ দেখবে বলে আশা কছেন কামার শিল্পের সাথে জরিতরা।
You cannot copy content of this page
Leave a Reply